টিন্ডাল প্রভাব কি?

কলয়েড কণার আকার (1nano meter – 1micro meter) পানিতে দ্রবণীয় অন্যসব কণার আকার (0.1 – 2nm) অপেক্ষা বড় হওয়ায় কলয়েড কণাসমূহ দৃশ্যমান আলো বিচ্ছুরণ করতে পারে। কলয়েড কণাসমূহ দ্বারা দৃশ্যমান আলোর বিচ্ছুরণ ধর্মকে আবিষ্কারক বিজ্ঞানী টিন্ডালের নামানুসারে টিভাল প্রভাব (Tyndall effect) বলে।

টিন্ডাল প্রভাবের ব্যাখ্যা

কোনো বস্তু কণার আকার আপতিত আলোক রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (380-780 nm এর) অর্ধেক অপেক্ষা বড় হলে তখন ঐ বস্তু কণা ঐ আলোক রশ্মিকে বিচ্ছুরিত করতে পারে; এর ছোট হলে পারে না।

অধিকাংশ কলয়েডের কণা গুলোর আকার দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে ছোট হওয়ায় ঐ সব কলয়েড কণা সাধারণ মাইক্রোস্কোপে সরাসরি দেখা যায় না; আলট্রা মাইক্রোস্কোপে দেখা যায়।

অপরদিকে, স্বচ্ছ কাচের বিকারে নেয়া কলয়েডের ওপর বিকারের পার্শ্ব থেকে উজ্জ্বল আলো উত্তল লেন্সের মাধ্যমে কলয়েড কণার ওপর আপতিত হলে তখন কলয়েড কণাগুলো প্রথমে ঐ আপতিত আলোক রশ্মিকে অধিশোষণ করে। পরে ঐ অধিশোষিত দৃশ্যমান আলো (380-780 nm) থেকে ক্ষুদ্রতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়। তখন সাধারণ মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে কলয়েড মিশ্রণকে ওপর থেকে দেখলে কলয়েড কণাগুলো থেকে ক্ষুদ্র উজ্জ্বল আলোক বিন্দু দেখা যায়। এটিই টিন্ডাল প্রভাব বলে। 

প্রকৃতিতে টিন্ডাল প্রভাবে ওপরের আকাশ আসমানি (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 451 – 500nm এর আলোর বিচ্ছুরণ) এবং গভীর সমুদ্রের জলরাশি নীল বর্ণ দেখায় (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য = 424 – 450nm এর আলোর বিচ্ছুরণ)।

টিন্ডাল প্রভাবের ব্যবহার

(১) স্পর্শ পদ্ধতিতে H2SO4 উৎপাদনে ব্যবহৃত SO2 এবং O2 গ্যাস মিশ্রণে ধূলিকণার উপস্থিতি (যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মূল্যবান প্রভাবক V2O5 অথবা Pt এর প্রভাবন ক্ষমতা নষ্ট করে) শনাক্ত করার জন্য টিন্ডাল প্রভাব ব্যবহৃত হয়। 

(২) টিন্ডাল-প্রভাব দ্বারা একই বর্ণের একটি কলয়েড মিশ্রণ ও একটি প্রকৃত দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য করা যায়। 

(৩) টিন্ডাল-প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী জিগমন্ডি (Zsigmondy)  আল্ট্রামাইক্রোস্কোপ আবিষ্কার করেন।