বর্ণচিত্রণ (বর্ণবিশ্লেষণ) পদ্ধতি বা ক্রোম্যাটোগ্রাফি কি?

গ্যাসিডির (H.G. Gassidy) মতে, “ক্রোম্যাটোগ্রাফি হলো মূলত একটি পৃথকীকরণ পদ্ধতি যা প্রধানত আণবিক মিশ্রণের পৃথকীকরণে ব্যবহৃত হয়।”

এটি আণবিক মিশ্রণে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান পদার্থকে পৃথক করার এক বর্ণ চিত্রণ পদ্ধতি। একটি স্থির দশার পৃষ্ঠতলে অধিশোষিত বা আবদ্ধ আণবিক মিশ্রণের উপাদানসমূহকে উপযুক্ত সচল দশার দ্রাবকে দ্রবীভূত বা বণ্টিত করে মিশ্রণ থেকে পৃথক করার পদ্ধতিকে ক্রোমেটোগ্রাফি বলে। প্রতিটি উপাদান বৈশিষ্ট্যমূলক বর্ণের স্তর হিসেবে পৃথক হয় বলে একে ক্রোম্যাটোগ্রাফি বা বর্ণচিত্রণ বলে।

বর্ণচিত্রণ (বর্ণবিশ্লেষণ) পদ্ধতিতে পৃথকীকরণের মূলনীতি (Principle)

এ পদ্ধতিতে সাধারণত একটি বৃহদাকার পৃষ্ঠতলে (high surface area) যেমন, (i) গ্লাস কলাম বা ব্যুরেটে একটি অধিশোষক (adsorbent) (স্থির দশা) নিয়ে তার উপরিভাগে অথবা (ii) কোন কঠিন অবলম্বনে তরল পদার্থের উপরে মিশ্রণকে অধিশোষিত করা হয়। এরপর তার উপর বা মধ্য দিয়ে তরল বা গ্যাস (সচল দশা) প্রবাহিত করলে মিশ্রণের উপাদানসমূহ তাদের অধিশোষণের হার (rate of adsorption) এর ভিন্নতার উপর নির্ভর করে পৃথক হয়। 

কোন উপাদান অধিশোষকে কতটা অধিশোষিত হবে তা নির্ভর করে ঐ উপাদানের গঠনের উপর। উপাদানটি যত পোলার হবে (-CHO<-NH2<-OH<-COOH মূলক থাকলে) অধিশোষকের মধ্যে ততই অধিকহারে অধিশোষিত হবে এবং সচল দশার দ্রাবক যত পোলার হবে অধিশোষিত পোলার উপাদানটি ততই অধিক দ্রবীভূত হবে। অনুরূপভাবে অপোলার উপাদান, অধিশোষকে কম অধিশোষিত হবে এবং অতি সহজে অধিক পোলার উপাদান দ্বারা পৃথক হবে। সুতরাং বলা যায় যে, অধিশোষণের মাত্রা ও সচল দশায় দ্রাব্যতার হারের উপর ক্রোম্যাটোগ্রাফির পৃথকীকরণ পদ্ধতি নির্ভরশীল। অধিশোষণ ও দ্রাব্যতা উভয়ই পদার্থের ভৌত ধর্ম।

এদের উপর নির্ভর করে ক্রোমোটোগ্রাফিকে মোটামুটি দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয় :

১. অধিশোষণ ক্রোম্যাটোগ্রাফি (adsorption chromatography)

ক. স্তম্ভ ক্রোম্যাটোগ্রাফি (Column Chromatography, CC)

খ. পাতলাস্তুর ক্রোম্যাটোগ্রাফি (Thin Layer Chromatography, TLC)

২. বিভাজন ক্রোম্যাটোগ্রাফি (Partition Chromatography)

ক. কাগজ ক্রোম্যাটোগ্রাফি (Paper Chromatography, PC)

খ. গ্যাস ক্রোম্যাটোগ্রাফি (Gas Chromatography, GC)

বর্ণচিত্রণ (বর্ণবিশ্লেষণ) পদ্ধতির ব্যবহার

আধুনিক যুগে ক্রোম্যাটোগ্রাফির ব্যবহার বহুবিধ। তন্মধ্যে যে ক’টি উল্লেখযোগ্য সংক্ষেপে সেগুলো হচ্ছে 

১. জৈব যৌগের পৃথকীকরণ ও বিশোধন,

২. জানা যৌগের সাথে অন্য কোন যৌগের তুলনা বা শনাক্তকরণ,

৩. কোন নমুনায় (sample) একটি বিশেষ কোন যৌগের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি নির্ণয়,

৪. যে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া মনিটরিং বা পরীক্ষণ,

৫. শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুর গুণগত মান নির্ণয়,

৬.কোন নমুনায় উপাদানসমূহের পরিমাণ নির্ণয়

৭. পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়ায় দূষণ বস্তু শনাক্তকরণ,

৮. কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্ভূত সমাণুসমূহের উপস্থিতি বা অনুপাত নির্ণয়,

৯. সমগোত্রীয় জৈব যৌগের সদস্যদের পৃথকীকরণ ইত্যাদি।