কীটনাশক কী? এর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।

কীটনাশক

যেসব অজৈব ও জৈব পদার্থের রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে জনস্বার্থের বিরোধী বা পরিপন্থি বিভিন্ন ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গের মৃত্যু ঘটানো হয় কিংবা এদের প্রতিহত বা দমন করে ক্ষতির মাত্রা কমানো হয় তাদেরকে কীটনাশক (Insecticide) বলে। যেমন- ডায়াজিনন, ফুরাডন ইত্যাদি।

কীটনাশকের শ্রেণিবিভাগ গঠনগত বা রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কীটনাশককে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়।

১। অজৈব কীটনাশক

২। জৈব কীটনাশক

১. অজৈব কীটনাশক

যে সকল বিষাক্ত অজৈব পদার্থ কীটনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তাদেরকে অজৈব কীটনাশক বলে। সর্বপ্রথম আর্সেনিক বা আর্সেনিকের যৌগসমূহ কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার শুরু হয়েছিল। বর্তমানে অজৈব কীটনাশকের তেমন ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে প্রচলিত কিছু অজৈব কীটনাশকের পরিচয় নিম্নে দেওয়া হলো।

(ক) আর্সেনিক যৌগ

১৬ শতকে চীনে কীটনাশক হিসাবে আর্সেনিক সালফাইড ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীে বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে আর্সেনিক অ্যাসিটেট বৃহৎ পরিসরে ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশের জন্য আর্সেনিক মারাত্মক ক্ষতিকর হওয়ায় এসব যৌগের ব্যবহার পরবর্তীতে অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে। যে সকল আর্সেনিক যৌগ কীটনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে Pb আর্সেনেট অ্যাসিড, সোডিয়াম আর্সেনাইট, আর্সেনাস অক্সাইড, ক্যালসিয়াম আর্সেনেট প্রভৃতি অন্যতম।

(খ) সালফার যৌগ

কিছু কিছু সালফার যৌগ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীট ও মাকড়শা দমনের জন্য ব্যবহৃত হয়, এগুলো ছাত্রাক দমনেও বেশ কার্যকরী, CuSO4, ও Ca(OH)2; এর মিশ্রণ ছত্রাক দমনে ব্যবহৃত হয়।

(গ) সায়ানাইড যৌগ

KCN খুবই বিষাক্ত পদার্থ। এটি কীটপতঙ্গ দমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, ছত্রাক জনিত সমস্যা দূরীকরণে মারকিউরিক সায়ানাইড Hg(CN)2 ব্যবহার করা যেতে পারে।

(ঘ) প্যারিস গ্রীন

কপার অ্যাসিটো আর্সেনাইট কে প্যারিস গ্রীন বলা হয়। এটি সর্বপ্রথম মেরু অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশা নিধনে ব্যবহৃত হয়েছিল। মশার লার্ভা নিধনে এটি এখনো কার্যকরী।

জৈব কীটনাশক (Organic Insecticides)

যেসব কীটনাশক জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত তাদেরকে জৈব কীটনাশক বলে।

জৈব কীটনাশকসমূহকে নিম্নরূপে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১. প্রাকৃতিক জৈব কীটনাশক

২. সংশ্লেষিত জৈব কীটনাশক।

প্রাকৃতিক জৈব কীটনাশক

যে সকল কীটনাশক প্রাকৃতিক উৎস হতে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাকৃতিক জৈব কীটনাশক বলে । যেমন- নিকোটিন, রোটেনান ইত্যাদি।

উৎস অনুসারে প্রাকৃতিক জৈব কীটনাশকসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :

(i) উদ্ভিজ্জ জৈব কীটনাশক

উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত কীটনাশকসমূহকে উদ্ভিজ্জ জৈব কীটনাশক বলে। যেমন : নিকোটিন, পাইরোথিন ইত্যাদি।

(ii) প্রাণিজ জৈব কীটনাশক

প্রাণিজ থেকে প্রাপ্ত কীটনাশকসমূহকে প্রাণিজ জৈব কীটনাশক বলে। যেমন- কডলিভার ওয়েল।

সংশ্লেষিত জৈব কীটনাশক

যেসব কীটনাশক সংশ্লেষণ বা কৃত্রিম উৎস হতে পাওয়া যায় তাদেরকে সংশ্লেষিত জৈব কীটনাশক বলে। যেমন, ডি.ডি.টি. বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড (BHC) ইত্যাদি। সংশ্লেষিক জৈব কীটনাশকসমূহকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

(i) জৈব ক্লোরিন কীটনাশক

(ii) জৈব ফসফেট কীটনাশক

(ii) কার্যামেট কীটনাশক।