প্রস্বেদনের উপকারিতা বা উদ্ভিদের জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব কি

প্রস্বেদন প্রক্রিয়া উদ্ভিদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন বা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তথা প্রয়োজনীয়তার বিশেঙ্গ কারণগুলো নিচে দেয়া হলো:

১। পানি শোষণ: পাতায় প্রস্বেদনের ফলে বাহিকা নালীতে পানির যে টান পড়ে সেই টান মূলরোম কর্তৃক পানি শোষণে সাহায্য করে থাকে। তাই জীবন রক্ষাকারী পানি শোষণে প্রস্বেদনের ভূমিকা আছে। ২। পানি ও খাদ্যরস উপরে উঠানো পাতা ও অন্যান্য অংশে পানি ও খাদ্যরস পৌছানো অপরিহার্য। প্রস্বেদনের ফলে বাহিকা নালীতে পানির যে টান পড়ে তা সরাসরি পানিকে জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে মূল হতে কাণ্ড হয়ে পাতা পর্যন্ত পৌছাতে সহায়তা করে। এ পানির সাথে মূল কর্তৃক শোষিত খনিজ পদার্থ তথা সামগ্রিকভাবে খাদ্যরস উপরে উত্থিত হয়।

৩। লবণ পরিশোষণ: প্রস্বেদনের কারণে চারদিক থেকে লবণ উদ্ভিদমূলের কাছাকাছি আসে, তাই উদ্ভিদ সহজে নবং পরিশোষণ করতে পারে।

৪। পাতা ও অন্যান্য অংশে খনিজ লবণ পৌঁছানো: মূল কর্তৃক মাটি হতে যে লবণ শোষিত হয় তা স্বাভাবিকভাবে উঁচু গাছের পাতা পর্যন্ত পৌছাতে কয়েক বছর লাগার কথা। পাতার প্রতিটি ক্লোরোফিল অণু তৈরি হতে Mg এর দরকার যা অতিদ্রুত মূল হতে পাতা পর্যন্ত পৌঁছে থাকে কেবল প্রস্বেদনের কারণেই। কাজেই প্রস্বেদন না হলে পাতার ক্লোরোফিল সৃষ্ট বন্ধ হয়ে যেতো, ফলে খাদ্য তৈরিই বন্ধ হয়ে যেতো। 

৫। সকল কোষে পানি সরবরাহ প্রতিটি জীবিত কোষেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এর জন্য পানির প্রয়োজন। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার কারণে পানি সহজে সকল কোষে পৌছাতে পারে।

৬। সালোকসংশ্লেষণ: সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরির জন্য পানির প্রয়োজন (6CO2 + 12H2O = C6H12O6 + 6H2O+6O2)। প্রস্বেদন না হলে এ বিপুল পরিমাণ পানি পাওয়া যেতো না, ফলে সালোকসংশ্লেষণ তথা খাদ্য তৈরি কমে যেতো, এমনকি বন্ধ হয়ে যেতো।

৭। পাতায় উপযুক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন কাজের জন্য পাতায় একটি উপযুক্ত তাপমাত্রার দরকার। প্রস্বেদন গাছকে অত্যধিক গরম হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং উপযুক্ত তাপমাত্রা রক্ষা করে।

৮। কোষ বিভাজন: কোষ বিভাজনের জন্য কোষের স্ফীতি অবস্থার প্রয়োজন। প্রস্বেদন পরোক্ষভাবে এ স্ফীতি অব্যা এবং আরো পরোক্ষভাবে কোষ বিভাজনে সহায়তা করে।

৯। দৈহিক বৃদ্ধি: কোষ বিভাজন, স্বাভাবিক স্ফীতি রক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে প্রস্বেদন গাছের দৈহিক বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।

১০। শক্তি নির্গমন: পাতা সূর্য হতে প্রতি মিনিটে প্রচুর শক্তি শোষণ করে। এর মাত্র শতকরা একভাগ বিভিন্ন বিক্রিয়ায় জন্য খরচ হয়, বাকি অধিকাংশ তাপশক্তি প্রস্বেদনের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। নতুবা গাছ অধিক তাপে মরে যেতো।

১১। অভিস্রবণ প্রক্রিয়া: প্রস্বেদনের ফলে কোষরসের ঘনত্ব বাড়ে, ফলে সহজে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া ঘটে। ১২। পাতায় ছত্রাক আক্রমণ রোধ: প্রস্বেদনের ফলে পাতার পৃষ্ঠে কিছু পানিগ্রাহী লবণ জমা হয়, যা ছত্রাক আক্রমণ হতে পাতাকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

প্রস্বদন সম্পর্কিত অন্যান্য প্রশ্ন-

প্রস্বেদন (Transpiration) কি?

প্রস্বেদনের বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ কি?

শ্বসনের অভ্যন্তরীণ প্রভাবকসমূহ কি কি?