শৈবালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance of Algae) বর্ণনা কর।


শৈবালের উপকারী দিক বেশি, কিন্তু অপকারী দিকও আছে। শৈবালের উপকারী দিক বেশি। কয়েকটি উপকারী ভূমিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  1. বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন যোগ: শৈবালের সবচেয়ে উপকারী দিক হলো বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন সংযোগ। লক্ষ লক্ষ বছর আগে বায়ুমণ্ডলে কোনো অক্সিজেন ছিল না। নীলাভ-সবুজ শৈবাল প্রথম সালোকসংশ্লেষণ শুরু করে এবং লক্ষ লক্ষ বছরের সালোকসংশ্লেষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন জমা হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে (প্রায় ২০ ভাগ) আসে। এর পরই উচ্চ পর্যায়ের উদ্ভিদ ও প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।
  2. পরিবেশ দূষণ রোধ: সমুদ্রের বিপুল পরিমাণ শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে CO₂ গ্রহণ করে। এবং পরিবেশে ত্যাগ করে। মোট সালোকসংশ্লেষণের শতকরা ৬০ ভাগই শৈবালে ঘটে থাকে।
  3. উৎপাদক হিসেবে: বিভিন্ন জলাশয়ে (স্বাদু পানি এবং লোনা পানি) শৈবাল ফুড চেইন-এর প্রধান উৎপাদক হিসেবে কাজ করে।
  4. বায়োফুয়েল (Biofuel) তৈরি: Biofuel বা Biodiesel তৈরির জন্য বর্তমানে শৈবালকে বেছে নেয়া হয়েছে। তাই শৈবালকে second generation biofuel নামে অভিহিত করা হয়েছে। Botryococcus braunii এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। Chlorella, Scenedesmus কেও ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে।
  5. গোয়েন্দা সাবমেরিন-এর অবস্থান নির্ণয়। নীলাভ সবুজ শৈবালে অবস্থিত phycobilin protein নামে অতিরিক্ত রঞ্জক কণিকা (C-phycoerythrin, C-phycocyanin) দৃশ্যমান আলোর বাইরের আলোকরশ্মি শোষণ করতে পারে। পানির নিচে গোয়েন্দা সাবমেরিন হতে বিকরিত বিভিন্ন রশ্মি এরা শোষণ করে নেয় এবং এই শোষিত রশ্মির পরিমাণ থেকে আশপাশে গোয়েন্দা সাবমেরিন-এর অবস্থান জানা যায়।
  6. সমুদ্রে মাছের অবস্থান নির্ণয় সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে সময় সময় শৈবালের অধিক বৃদ্ধি ঘটে এবং খাদ্য প্রাপ্তির আশায় মাছ ঐ অঞ্চলে ছুটে আসে। স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণে ঐ অঞ্চলগুলো নির্ণয় করে মাছ ধরার ট্রলারকে অবস্থান নির্দেশ করা হয়, ফলে প্রচুর পরিমাণ মাছ অল্পসময়ে ধরা সম্ভব হয়।
  7. মাটির বয়স নির্ণয় জলাশয়ের তলদেশে মাটির স্তরে জমাকৃত ডায়াটম খোলস এর কার্বন ডেটিং করে ঐ মাটির উৎপত্তির বয়স নির্ণয় করা হয়।
  8. মানুষের খাদ্য হিসেবে: প্রাচীনকাল হতে বিভিন্ন প্রজাতির শৈবাল, যেমন- Ulva lactuca-কে মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে আসছে। মানুষের খাদ্য তালিকায় Chlorella একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ শৈবাল।
  9. পশুখাদ্য হিসেবে: Laminaria saccharina, Alaria, Rhodymenia প্রভৃতি শৈবাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
  10. শৈবাল থেকে ন্যানোফিল্টার উৎপাদন: ন্যানোফিল্টার হলো এমন ফিল্টার (ছাঁকনি) যা দিয়ে আমাদের শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী সকল ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ছেঁকে ফেলা যায়, তাই পানি হয় সম্পূর্ণভাবে জীবাণু মুক্ত ও ঝুঁকি মুক্ত।