শূন্য থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

যারা এবারই প্রথম বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই লেখাটি মূলত তাদের জন্য। যারা এর আগেও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারেননি তারাও উপকৃত হবেন বলে আশা করছি। 

প্রথমেই একটি কথা মাথায় গেথে নিন, প্রয়োজনে আপনার মোবাইলের ব্যাকগ্রাউন্ড/ওয়ালপেপারে সেট করুন- বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাশের কোন শর্টকাট পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, ফেসবুক গ্রুপ, বিসিএস ক্যাডার আপনাদের বলবে, শর্টকাটে পড়লেই হয়। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনাকে পরিশ্রম করতেই হবে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

আমাদের এই লেখার উদ্দেশ্য হলো, আপনি যেন অহেতুক পরিশ্রম না করেন। অনেক ভূমিকা হয়েছে চলুন এবার দেখা যাক কীভাবে শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতি নেয়া যায়।

ধাপ-১ঃ মানসিক প্রস্তুতি

বিসিএস হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চাকরির পরীক্ষা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়। কাজেই পরীক্ষ কঠিন হবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এখানেই নতুন প্রার্থীরা ভয় পেয়ে যান! তারা মনে করেন, আরে বাবা! বিসিএস আমাকে দিয়ে হবে না। এটা একটা ভুল ধারনা। 

শূন্য থেকে বিসিএস প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো- আপনি বিশ্বাস করবেন, আপনি পারবেন।

মানসিক প্রস্তুতির সব চেয়ে বড় বাধা হচ্ছে ফ্রেন্ড সার্কেল। আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল নেগেটিভ মানুষ দিয়ে ভরা। এরা নিজেরা কিছু করবে না। আপনাকেও কিছু করতে দেবে না। শুধুমাত্র নেগেটিভিটি ছড়াবে। এদের থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও দূরে থাকুন।

ধাপ-২ঃ সিলেবাস

প্রথমেই পিএসসির ওয়েব সাইট থেকে প্রিলিমিনারিপরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করে নিন।  

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন 

একবার করে প্রতিটি বিষয়ের সিলেবাসে চোখ বুলিয়ে যান। সিলেবাস দেখলে আপনি ধারনা পেয়ে যাবেন আসলে আপনাকে কি কি বিষয়ে পড়তে হবে। বিশাল সাইজের সিলেবাস দেখে হতাশ লাগতে পারে। সত্য কথা কি, সিলেবাস পুরোটা কেউই কাভার করতে পারে না। দরকারও নেই। আপনার তো ২০০ নম্বরের মধ্য ২০০ই পেতে হচ্ছে না। আপনার টার্গেট হচ্ছে-১৪০ পাওয়া। 

ধাপ-৩ঃ বই কেনা

সব সময় চেষ্টা করবেন নতুন বই কিনতে। নতুন বই না পাওয়া গেলে পুরাতন নিতে পারেন। নিচের বই গুলোই যথেষ্ট-

  1. নবম দশম শ্রেনির বাংলা ব্যকরণ
  2. নবম-দশম শ্রেণির ‘ভূগোল ও পরিবেশ’
  3. ইংলিশ ফর কম্পিটিটিভ এক্সাম
  4. বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট
  5. বিসিএস প্রিলিমিনারি এনালাইসিস
  6. বিষয়ভিত্তিক বই সমূহ

বিষয়ভিত্তিক বই গুলোর জন্য এমপিথ্রি ভালো। জয়কলি বা অন্যান্য গুলোও দেখা যেতে পারে। ডাইজেস্টের জন্য প্রফেসরস, অ্যাসিওরেন্স বা ওরাকল দেখতে পারেন। তবে প্রফেসরস ও অ্যাসিওরেন্স বেশি ভালো লেগেছে আমার।

ধাপ-৪ঃ বিগত বছরের প্রশ্ন

প্রিলিমিনারিডাইজেস্ট দিয়ে শুরু করবেন। ৩৫ বিসিএস থেকে শুরু করে সাম্প্রতিকতম বিসিএস পর্যন্ত সব বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রশ্ন গুলো দেখতে থাকুন।  প্রথম এক সপ্তাহ শুধুমাত্র প্রিলিমিনারি প্রশ্নই দেখবেন। বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে প্রায় ৭০-৮০ নম্বর কমন পাওয়া যায়। এক সপ্তাহের মধ্যে বিসিএসের প্রিলিমিনারি প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে আপনার একটা ধারনা হয়ে যাবে। 

বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজি গ্রামারের পার্ট গুলো বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন। আপনার গ্রামার সব জানার প্রয়োজন নেই। বিগত সালের প্রশ্ন দেখতে দেখতে গ্রামার সম্পর্কে ধারণা হয়ে যাবে।

বিগত বছরের প্রশ্নের কোন উত্তর যেন ভুলে না যান। বুঝুন আর না বুঝুন সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আপনার জানা থাকা চাইই চাই। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ধাপ-৫ঃ বিষয় ভিত্তিক পড়া

আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেটা দিয়ে আগে শুরু করতে হবে। আমার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভালো লাগতো। কাজেই আমি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিয়ে শুরু করেছিলাম। 

যখন যে বিষয়টি পড়বেন, চেষ্টা করবেন ব্যাখ্যা সহ পড়তে। কিছু কিছু জিনিস আপনাকে মুখস্থ করতেই হবে। যেমন, ব্যাকরণের উপসর্গ গুলো, জাতিসংঘের প্রধান প্রতিষ্ঠান ও তাদের হেডকোয়ার্টার কোথায়। তাই বলে ১৯৪ টা দেশের রাজধানী ও তাদের মুদ্রার নাম মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ মহাদেশ বা এলাকার দেশের রাজধানী ও মুদ্রার নাম জানা থাকলেই হয়। 

অবশ্যই প্রতিদিন অংক করবেন। প্রিলিমিনারি প্রশ্নের অংক গুলো নিজে নিজে করে উত্তরের সাথে মেলাবেন। শর্টকাট টেকনিক গুলো শিখে নিন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আপনি কীভাবে অংক করেছেন সেটা কেউ দেখতে চাইবে না। 

প্রিলিমিনারি পাশের গোপন কথা

মনে করুন আপনার প্রস্তুতি খুব ভালো। আপনি কি পাশ করবেন? উত্তর হচ্ছে-না। বিসিএসে আবেদন করে কয়েক লাখ প্রার্থী। এর মধ্যে কম্পিটিশন হয় কম বেশি ১০ হাজার জনের মধ্যে। এই ১০ হাজার জনের মধ্যে কমপক্ষে ৮ হাজার প্রার্থী ক্যাডার হওয়ার যোগ্য। কিন্তু সবাই হতে পারে না।

  1. প্রিলিমিনারি পাশ করতে চাইলে আপনাকে প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে। অনেক ভালো প্রার্থীরা প্রিলিমিনারিপাশ করতে পারে না কেবল মাত্র পরীক্ষার হলের চাপ নিতে পারে না এজন্য। 
  2. যত বেশি মডেল টেস্ট দিবেন তত বেশি কনফিডেন্স বাড়বে আপনার। আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ঘাটতি কোথায়। পরীক্ষার হলের ২ ঘন্টা টাইম ম্যানেজমেন্টই আপনাকে পাশ করতে সাহায্য করবে। 
  3. এই ২ ঘন্টা মাথা ঠান্ডা রাখার অভ্যাস করবেন। অংকে আপনি যতই দক্ষ হোননা কেন, ভুলেও কখনো অংকের উত্তর আগে দিতে যাবেন না। 
  4. কারও কাছে উত্তর জানতে চাইবেন না। উত্তর মেলাতেও যাবেন না। কাউকে সাহায্য করতেও যাবেন না। 
  5. ১০০% নিশ্চিত না হয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন না। ‘মনে হচ্ছে এটা সঠিক’ এই টাইপের উত্তর কখনোই দিবেন না। 
  6. ধরুন আপনার প্রশ্নের সেটে প্রথম প্রশ্ন গুলো আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী। আপনি উত্তর দিতে গিয়ে দেখলেন, শুধুমাত্র ৪-৫ পারছেন। বাকি গুলো আপনার কমন পড়ে নাই। এই অবস্থায় কখনোই ঘাবড়ে যাবেন না। প্রশ্ন কঠিন হলে শুধুমাত্র আপনার জন্যই হয়নি। সবাইর জন্যই হয়েছে। বাকিরাও আপনার মতই ৪-৫ টা করেই উত্তর দিতে পেরেছে।
  7. আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, চেষ্টা করবেন সে বিষয়ে যেন কোন উত্তর ভুল না হয়। তাহলে দেখবেন যে বিষয়ে আপনি দুর্বল সেটার ক্ষতিপূরণ করতে পারছেন।

টুকিটাকি অন্যান্য প্রস্তুতি

প্রতিদিন পেপার পড়ার চেষ্টা করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কি কি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখার চেষ্টা করবেন। দৈনিক ৫-৬ ঘন্টা পড়লে আশা করা যায় ৩ মাসের মধ্যে আপনার ভালো একটা প্রস্তুতি হয়ে যাবে।