বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে দিব?

বাংলাদেশের অধিকাংশ চাকরি প্রার্থীর স্বপ্নের চাকরি হল বিসিএস! স্বপ্নের চাকরি কেনই বা হবে না? আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান, জনগনের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার সু্যোগ এই বিসিএস ছাড়া আর অন্য কোন চাকরিতে এত বেশি নেই। সেই সাথে অবসর জীবনের আর্থিক নিরাপত্তা তো আছেই।

কেউ প্রশাসন ক্যাডারে তো কেউ পুলিশ ক্যাডারে যেতে চান। অনেকেই আছেন যারা পররাষ্ট্র ক্যাডারে গিয়ে আন্তর্জাতিক মন্ডলে নিজের দেশকে তুলে ধরতে চান। তারপরেও অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন জাগে, বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে দিব?  বিশেষ করে নতুন যারা তারা তো সংশয়ে পড়েন। প্রথম চয়েস না হয়ে সবারই ফিক্সড থাকে, কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় বা বাকি ক্যাডার গুলোর ক্রমই বা কেমন দিবে? কোন ক্যাডার কি রকম!

বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে দিব?

৪৫ তম বিসিএসে পোস্ট ছিল মোট ২৩০৯ টি। এর মধ্যে জেনারেল ক্যাডার ৫২৪ টি, ১৭৮৫টি টেকনিক্যাল বা কারিগরি ক্যাডার। জেনারেল ক্যাডারে সবাই আবেদন করতে পারবে, টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য বিষয়ভিত্তিক রিকোয়ারমেন্ট থাকে।

ক্যাডার চয়েস একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর উপর আপনার সারা জীবনের চাকরি নির্ভর করে। এমন অনেক প্রার্থীকে দেখেছি শুধুমাত্র ভুল চয়েসের জন্য পরে আফসোস করতে। কাজেই ক্যাডার চয়েস দেয়ার সময় সাবধান হোন।

অনেকের শিক্ষকতা পছন্দের পেশা, কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের যেভাবে মূল্যায়ন করা হয় তাতে শিক্ষকতা করবেন কি না সেটা আগে ভাবুন। তাছাড়া শিক্ষা ক্যাডার আর জেনারেল ক্যাডারের নম্বর ভিন্ন ভাবে কাউন্ট হয়। তাই শিক্ষা ক্যাডার আগে চয়েস দেয়া অর্থহীন। অবশ্য আপনি যদি একান্তই শিক্ষক হতে চান তাহলে ভিন্ন কথা। শিক্ষা ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিলে ভাইভায় অবশ্য স্যাররা সাহায্য করেন, বেশ সহানুভূতি পাবেন। কিন্তু তারপরও বলব জেনারেল ক্যাডার ফার্স্ট চয়েস দিন।

পররাষ্ট্র ক্যাডারে জয়েন করার ইচ্ছা না থাকলে চয়েস লিস্টে দিবেন না। যদি দেন তাহলে এক নম্বর পজিশনে দিতে হবে। যদি সেকেন্ড পজিশনেও দেন তাহলে ভাইভায় তুলোধুনো করে ফেলবে। কাজেই সাবধান।

সরকারি চাকরির মূল মজা হল অফিস প্রধান হওয়া। যেমন- ইউএনও বা এসি (ল্যান্ড)। আপনি যে ক্যাডারেই যান না কেন অফিস প্রধান না হলে আপনাকে অন্যের কাছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়িত রিপোর্ট করতে হবে। এজন্যই প্রশাসন ক্যাডার এক নম্বর চয়েস দেয়া উচিৎ। বাংলাদেশের বেশিরভাগ অফিসের বস প্রশাসন ক্যাডারের। আর প্রশাসন ক্যাডারে তিন বছর পার হলেই অফিস প্রধান হওয়ার সুযোগ থাকে।

চলুন দেখা যাক বিসিএস ক্যাডার চয়েস লিস্ট

১। বিসিএস প্রশাসন

বিসিএস প্রশাসন হল সব ক্যাডারের বস। সরকারের সব অফিসে তাদের বিচরণ। প্রশাসন ক্যাডাররাই মূলত সরকারের নীতি নির্ধারনে সাহায্য করে থাকে। এদের নিয়মিত প্রমোশন হয়। অন্যান্য সব ক্যাডার কোন না কোনভাবে প্রশাসন ক্যাডারের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রীপরিষদ সচিব, সর্ব নিম্ন পদ সহকারি কমিশনার। আপনি যদি ইংরেজিতে দূর্দান্ত হন, যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে চাকরি করার ইচ্ছা না থাকে বা পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা না থাকে তাহলে অবশ্যই প্রশাসন ক্যাডার এক নম্বর চয়েস দিবেন। অন্যান্যরা যাইচ্ছা বলুক। প্রশাসন ক্যাডার এক নম্বর চয়েস।

২। বিসিএস পুলিশ

পুলিশের চাকরির প্রতি ক্ষোভ না থাকলে পুলিশ দ্বিতীয় চয়েস দিতে পারেন। আমার দুর্বলতা ছিল আমি সব সময় প্রথম চয়েস দিয়েছি। পুলিশ নিয়ে বলার কিছু নেই। আপনি পুলিশ ক্যাডারে থাকলে আপনার চৌদ্দ গুষ্টির কাউকে কেউ ঝামেলায় জড়ানোর আগে দশ বার ভাববে।

তবে প্রমোশন স্কোপ কম। একই ব্যাচে জয়েন করে আপনার প্রশাসনের বন্ধু পঞ্চম গ্রেডে চলে যাবে আর পদ না থাকায় আপনি নিচের গ্রেডে থাকবেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এটা চেঞ্জ হয়েছে।

এই ক্যাডারে শান্তি পাবেন না। ফ্যামিলি লাইফ বলে কিছু থাকবে না। সবসময় দৌড়ের উপর থাকতে হবে। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে গেলে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া পুলিশের রেশন সুবিধা আছে। ব্যবহারের জন্য গাড়ি এবং বডিগার্ড পাবেন।

৩। কাস্টমস ও এক্সাইজ

যদি প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহারের প্রতি দুর্বলতা না থাকে তাহলে কাস্টমস ও এক্সাইজ ফার্স্ট চয়েস দিন। প্রচুর বৈধ আর্থিক সুবিধা আছে এই ক্যাডারে। বিভিন্ন সময় নিউজে যে চোরাচালান করা মালপত্র, সোনার চালান ধরা পরে তার মোট আর্থিক মূল্যের ৫% এরা পায়। সব সরকারের এই ক্যাডারের প্রতি আলাদা নজর থাকে। এরাই সরকারের বেশির ভাগ টাকা আয় করে দেয়।

৪। বিসিএস কর

বুঝতেই পারছেন ট্যাক্স কালেকশন এদের কাজ। সবাই এদের ভয় করে। এমনকি অন্য ক্যাডারের অফিসাররাও। ইনকাম ট্যাক্স থেকে শুরু করে ভূমি কর বাদে সব ধরনের কর এরা সংগ্রহ করে থাকে।

৫। বিসিএস নীরিক্ষা ও হিসাব

সরকারি অফিস, কাজ, কেনাকাটা অর্থ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় এরা অডিট করে থাকে।  ঢাকা ভিত্তিক পোস্টিং, অবশ্য ইদানীং জেলাতেও পদায়ন হয়। প্রমোশন ভালো দেয়। আপনার কোন আত্মীয়ের যদি পেনশন থাকে তাহলে আপনি জানেন এদের কাজ কি। যেকোনো সরকারি চাকরি তে জয়েন করার পরে মরা পর্যন্ত এদের সাথে আপনি কাজ করবেন।

৬। বিসিএস আনসার

প্যারাহীন চাকরি। জয়েন করার সাথে সাথে গাড়ি পাবেন। পুলিশের মত অতটা ক্ষমতা না থাকলেও বেশ ভাব আছে। তাছাড়া ইউনিফর্ম ওয়ালা ক্যাডার মানেই বিশেষ কিছু। 

৭। বিসিএস খাদ্য

৮। বিসিএস সমবায়

৯। বিসিএস ডাক

১০। বিসিএস রেলওয়ে পরিবহন ও বানিজ্যিক

১১। বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা

১৩। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা

বিসিএস ক্যাডার চয়েস এর ক্ষেত্রে পদ সংখ্যা কি গুরুত্বপূর্ণ

কোন পোস্টে কত পদ আছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। পদ সব সময় বাড়ে। সাধারণ শিক্ষা সবার শেষে দেয়ার কারণ, জেনারেল ক্যাডার না পেলে তবেই এই ক্যাডার বিবেচনা করে। পদ বেশি হলেই যে আপনার ক্যাডার পাওয়ার চান্স বেশি এমনটা না।

ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ, আইটি, ইংরেজি অর্থাৎ যে সাব্জেক্ট গুলোর প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ আছে সেগুলো বাদে বাকি গুলোতে সংসার চালানো কঠিন। জেনারেল ক্যাডারের বেতনের বাইরে বৈধ অনেক আর্থিক সুবিধা থাকে যা শিক্ষা ক্যাডারে পাবেন না। তাছাড়া প্রমোশন শিক্ষা ক্যাডারে খুবই স্লো।

বিসিএস ক্যাডার চয়েস কিভাবে দিব এই চিন্তা না করে bcs cadre choice technique  ফলো করলে আশা করি আপনি আপনার কাংখিত ক্যাডার পাবেন। ক্যাডার চয়েসের উপর ভিত্তি করেই ভাইভার প্রশ্ন হয়। সাধারণত ফার্স্ট চয়েস আর আপনার অনার্স-মাস্টার্স এর সাব্জেক্ট থেকেই প্রশ্ন করা হবে। পররাষ্ট্র ক্যাডারে যেতে চাইলে ইংরেজিতে দুর্দান্ত হতে হবে এবং অবশ্যই লিখিত পরীক্ষায় দুর্দান্ত করতে হবে।