রাসায়নিক সাম্যাবস্থা কি?

যে অবস্থায় একটি উভমুখী বিক্রিয়ায় সম্মুখ ও পশ্চাৎমুখী বিক্রিয়ার গতিবেগ পরস্পর সমান হয় তাকেই ঐ উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা তথা রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলে। সাম্যাবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ উৎপাদ তৈরি হয় ঠিক সমপরিমাণ উৎপাদ পুনরায় বিক্রিয়কে রূপান্তরিত হয়।

চিত্রে A ও B বিক্রিয়া করে C ও D উৎপাদন করে। এটি সম্মুখ বিক্রিয়া। আবার C ও D বিক্রিয়া করে A ও B উৎপাদন করে। এটি পশ্চাৎ বিক্রিয়া। শুরুতে সম্মুখ বিক্রিয়ার হার বেশি হয় এবং পশ্চাৎ বিক্রিয়ার হার কম থাকে। সময়ের সাথে পশ্চাৎ বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়। একটা নির্দিষ্ট সময় T পরে উভয় বিক্রিয়ার গতিবেগ সমান হয়ে যায় এবং সাম্যাবস্থা অর্জিত হয়।

রাসায়নিক সাম্যাবস্থা কি?

রাসায়নিক সাম্যাবস্থা কত প্রকার

রাসায়নিক সাম্যাবস্থা দুই প্রকার। যেমন –

  • সমসত্ত্ব বা সুষম সাম্যাবস্থা
  • অসমসত্ত্ব বা বিষম সাম্যাবস্থা

সমসত্ত্ব বা সুষম সাম্যাবস্থা

সমসত্ত্ব বা সুষম সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ উভয়ই একই দশায় (তরল, কঠিন বা গ্যাসীয়) থাকে। যেমন, সালফার ডাই অক্সাইড আর অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সালফার ট্রাই অক্সাইড উৎপাদন একটি সমসত্ত্ব বা সুষম সাম্যাবস্থার উদাহরণ।

অসমসত্ত্ব বা বিষম সাম্যাবস্থা

অসমসত্ত্ব বা বিষম সাম্যাবস্থায় বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন দশায় (তরল, কঠিন বা গ্যাসীয়) থাকে। যেমন, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট কে উত্তপ্ত করলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এখানে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ও ক্যালসিয়াম অক্সাইড কঠিন কিন্তু কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসীয় পদার্থ।

এছাড়াও আয়নিক সাম্যাবস্থা নামে অন্য আরেকটি সাম্যাবস্থা দেখা যায়। যেমন, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড পানিতে দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম আয়ন এবং ক্লোরাইড আয়ন তৈরি করে সাম্যাবস্থায় থাকে।

রাসায়নিক সাম্যাবস্থার বৈশিষ্ট্য

  1. উভমুখিতা : রাসায়নিক সাম্যাবস্থা কেবলমাত্র উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অর্জিত হয়।
  2. গতিবেগ : সাম্যাবস্থায় উভমুখী বিক্রিয়ার সম্মুখ ও পশ্চাৎমুখী প্রক্রিয়ার গতিবেগ পরস্পর সমান হয়।
  3. বিক্রিয়ার অসম্পূর্ণতা : সাম্যাবস্থা অর্জিত হলে সাধারণভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া আর কোন দিকেই সম্পন্ন হতে পারে না। কারণ সাম্যাবস্থায় যে পরিমাণ বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে উৎপাদ গঠন করে ঠিক ততটুকু উৎপাদ আবার বিক্রিয়কে রূপান্তরিত হয়।
  4. সাম্যের অবস্থান : উভমুখী বিক্রিয়া যে কোন দিক থেকে শুরু করা যাক না কেন, অর্থাৎ বিক্রিয়ক বা উৎপন্ন দ্রব্য যা নিয়েই বিক্রিয়া শুরু করা হোক, সর্বদা একই অবস্থানে সাম্যাবস্থা অর্জিত হয় ।
  5. সংঘটন ক্ষেত্র : রাসায়নিক সাম্যাবস্থা কেবলমাত্র আবদ্ধ পরিমণ্ডলে (closed system) সৃষ্টি হয়। যে পরিমণ্ডল থেকে কোন বস্তু বাইরে যায় না অথবা বাইরে থেকে কোন বস্তু পরিমণ্ডলের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। তাকে আবদ্ধ পরিমণ্ডল বলে।
  6. নিয়ামকের প্রভাব : কোন সিস্টেম একবার সাম্যাবস্থায় পৌঁছলে এ সাম্যাবস্থা অনন্তকাল চলতে থাকে, যদি বাহ্যিক তাপমাত্রা, চাপ ও সংযুক্তির কোন পরিবর্তন না করা হয়।
  7. অনুঘটকের প্রভাব : অনুঘটক রাসায়নিক সাম্যাবস্থা সৃষ্টি বা বিলুপ্ত করতে পারে না। এটি শুধুমাত্র সাম্যাবস্থার অর্জনকে দ্রুত বা শ্লথ করতে পারে।