এইচপিভি ভ্যাকসিন কি

HPV ভ্যাকসিন কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারা এটি নেবে? ডোজ কতগুলো এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী হতে পারে? এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে পড়ুন।

এইচপিভি ভ্যাকসিন কি
Human Papillomavirus with explanation illustration

HPV ভ্যাকসিন কী করে?

HPV (Human papillomavirus) ভ্যাকসিন যৌনাঙ্গের সাদা স্রাব এবং সারভাইক্যাল ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি HPV ভাইরাসের কারণে হওয়া যোনি, ভালভা, পুরুষাঙ্গ বা মলদ্বারের ক্যান্সার থেকেও রক্ষা করে। এই ভ্যাকসিন HPV ভাইরাসজনিত মুখ, গলা, মাথা ও গলার ক্যান্সার প্রতিরোধেও কার্যকর।

এই ভ্যাকসিন নিলে শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয় যার জন্য কিছু ধরনের HPV ভাইরাসকে আমাদের ইমিউন সিস্টেম আইডেন্টিফাই করতে পারে। ফলে ভবিষ্যতে সেই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে ইমিউন সিস্টেম সহজেই তা নিষ্ক্রিয় করে ফেলে।

 HPV ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?

মানব প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) একটি যৌন সংক্রমিত ভাইরাস, যা কিছু ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে সাদা স্রাব বা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তবে অধিকাংশ সময় শরীর নিজেই এই ভাইরাসকে মেরে ফেলতে  পারে। কিন্তু যদি HPV দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে থেকে যায়, তা হলে এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। HPV ভ্যাকসিন শরীরকে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যা পুরুষ ও নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

HPV ভ্যাকসিন কাদের জন্য এবং কখন নেওয়া উচিত?

HPV ভ্যাকসিন ৯ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দেওয়া যায়। সাধারণত ১১ বা ১২ বছর বয়সেই এই ভ্যাকসিন নেওয়া সবচেয়ে ভালো, কেননা সেক্সচুয়াল ম্যাচিউরিটি আসার আগেই আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়ে যায় ফলে এই ভাইরাস গুলো থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকা যায়।

HPV ভ্যাকসিনের ডোজ:

  1. ১৫ বছরের নিচে ব্যক্তিদের জন্য: দুইটি ডোজ, ৬ থেকে ১২ মাসের ব্যবধানে।
  2. ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের জন্য: তিনটি ডোজ, ৬ মাসের ব্যবধানে।
  3. ২৭ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের জন্য HPV ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা উচিত।

 কারা HPV ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না?

  • গর্ভাবস্থায় HPV ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না।
  • যদি কেউ প্রথম ডোজ নেওয়ার পর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া পান বা গুরুতর এলার্জি থাকে, তবে তারা এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না।
  • মাঝারি বা গুরুতর অসুস্থ হলে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সেক্সচুয়ালি ম্যাচুরড ব্যক্তিদের জন্য কি HPV ভ্যাকসিন কার্যকর?

HPV ভাইরাস শুধু একটি মাত্র ভাইরাস না। কয়েক ধরনের ভাইরাস মিলে HPV ভাইরাস ফ্যামিলি গঠিত (প্রায় ১০০ ধরনের) । ফলে কারো শরীরে যদি একধরনের HPV ভাইরাস থেকেও থাকে তবুও ভ্যাকসিন নিলে অন্যান্য HPV থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। 

কিন্তু যদি ইতোমধ্যে কোন HPV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েই যান তাহলে ঐ ভাইরাসের জন্য HPV ভ্যাকসিন আর কাজ করে না। 

HPV ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া মানেই ক্যান্সার হওয়া না। দীর্ঘ দিন HPV ভাইরাস আমাদের দেহে থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। 

HPV ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী?

HPV ভ্যাকসিন সাধারণত নিরাপদ এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব একটা নেই। ইনজেকশন সাইটে ব্যথা, ফোলা বা লালচে হওয়া সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা বা বমি হতে পারে। ১৫ মিনিট বসে থাকলে এই মাথা ঘোরা বা বমিভাব কমে যায়। এছাড়াও মাথাব্যথা, ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

HPV ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কি প্যাপ টেস্ট প্রয়োজন?

হ্যাঁ, প্যাপ টেস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। HPV ভ্যাকসিন সারভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, তবে এটি প্যাপ টেস্টের বিকল্প নয়। নিয়মিত প্যাপ টেস্ট করানো জরুরি, কারণ সারভাইক্যাল ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে শতভাগ চিকিৎসা করা যায়।

তাছাড়া HPV ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। আপনি নতুন কোন ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন।

HPV ভ্যাকসিন নিলে কি মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব হয়

না HPV ভ্যাকসিন নিলে মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব হয় না। এটা একেবারে ভুল ধারণা।

এইচপিভি ভ্যাকসিন কি

উপসংহার

HPV ভ্যাকসিন ক্যান্সার এবং সাদা স্রাব প্রতিরোধে কার্যকর। এটি পুরুষ ও নারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সেক্সচুয়াল ইন্টারকোর্সের আগে। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত মৃদু এবং এই ভ্যাকসিন নিরাপদ বলে প্রমাণিত। 

বাংলাদেশ সরকার বিনামূল্যে ১০-১৪ বছর বয়সী মেয়ে শিশুদের দেয়। সাধারণত এক সপ্তাহব্যাপি এই টিকা কার্যক্রম চলে। কাজেই আপনার মেয়ে শিশুকে নিকটস্থ টিকা কেন্দ্র থেকে টিকা দিন।

সরকারিভাবে টিকা দিলে https://vaxepi.gov.bd/take-card এই ওয়েবসাইট থেকে টিকা কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। টিকা কার্ড সংগ্রহ করার জন্য অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর লাগবে।